সকল প্রশংসা পরম করুণাময় মহামহিম সৃষ্টিকর্তার জন্য, যিনি সকল কিছু সৃজন করেছেন। তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য তিনি প্রজ্ঞাময়। তিনি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে অবিরত জ্ঞান আহরণের তাগিদ দিয়েছেন। প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হবার সমূহ সম্ভাবনা তৈরী হয়। সুতরাং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন এর কোন বিকল্প নেই। এ সর্বজনীন সত্যকে ধারণ করে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানসম্মত ছাত্র তৈরীর লক্ষ্য নিয়ে একঝাঁক নবীন ও প্রবীণ শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে উঠা সিদ্ধেশ্বরী কলেজ। সুর্নিদির্ষ্ট লক্ষ্য, মূল্যায়নযোগ্য শিক্ষাক্রম, অর্জনযোগ্য প্রতিশ্রুতি,বাস্তব ভিত্তিক মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরীর নিরলস প্রচেষ্টা এবং সময়াবদ্ধ কর্ম পরিকল্পনা আমাদের কাজের ব্রত। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রমনা থানার এলাকাধীন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কে অবস্থিত। ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৭০-৭১ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রি শাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে দিবা শাখাতে কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজটি তার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য বহন করে এলাকার শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি ও উচ্চশিক্ষার অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সিদ্ধেশ্বরী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ র্যাংকিং-এ সারা দেশের বেসরকারি কলেজসমূহের মধ্যে তৃতীয় ও ঢাকা অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি কলেজসমূহের মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি এ জনপদের জ্ঞান অন্বেষণের তপোবন বা চারণভূমি। সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের নৈশশাখায় পাঠদান শুরু করে। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আমিরুল হক সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশকালীন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকে এ অব্দি বহু প্রখ্যাত রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধ মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী প্রদান করে নতুন আঙ্গিকে কলেজটি পরিচালনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রেখেছেন। যার ধারাবাহিকতায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কলেজের নতুন একটি ১২তলা ও একটি ৬তলা ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনসহ আরও একটি ১২তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স, ৩ টি বিষয়ে প্রফেশনাল কোর্স, ১ টি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স, ১৫টি বিষয়ে মাস্টার্স শেষপর্ব এবং ৭টি বিষয়ে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। ডিগ্রি (পাস) কোর্সে বিএ, বিএসএস ও বিবিএস শ্রেণিতে পাঠদান করা হয়। ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায়শিক্ষা শাখায় পাঠদান করা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক, বিএ ও বিএসএস প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তেরো হাজার। সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান, শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড টিচার এবং ক্লাস মনিটরিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, প্রতিটি বিভাগে স্বতন্ত্র সেমিনার, বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগে একটি করে বিজ্ঞানাগার, একটি সমৃদ্ধি Computer Lab, পর্যাপ্তসংখক Multimedia শ্রেণিকক্ষ এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। অনার্স শ্রেণিতে অধ্যয়নরত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ‘প্রফেসর ফয়েজ হোসেন মেধা বৃত্তি’। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা ও মেধা শক্তিকে শাণিত করার জন্য জাতীয় দিবস উদযাপন, সভা সেমিনার, নিয়মিত শিক্ষাসফর, ইনডোর-আউটডোর খেলার ব্যবস্থা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্কাউটিং কার্যক্রম চালু রয়েছে। কলেজের সাফল্যের নেপথ্যে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের গভর্নিং বডির নির্মোহ ও নিয়মিত দিকনির্দেশনা এবং সুযোগ্য অধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে গড়া উঠা মেধাবী ও আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক দক্ষ প্রবীণ ও নবীন শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নিবেদিতপ্রাণ গুরুকূল যারা প্রশাসনিক কাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সফল করণে সদাজাগ্রত। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসি, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শি ছাত্রসমাজ বিনির্মাণ সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ব্রত।