সকল প্রশংসা পরম করুণাময় মহামহিম সৃষ্টিকর্তার জন্য, যিনি সকল কিছু সৃজন করেছেন। যেখানে কোন স্বপ্ন নেই, বৈপ্লবিক চেতনা নেই, সেখানে ভালো কাজ সংগঠিত হয় না। সময়োপযোগী, স্বপ্ন, চিন্তা, সাহস ও দৃঢ় মনোবল এবং প্রচেষ্টাই মানুষকে তার কর্মের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রমনা থানার অধীনে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজটি তার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য বহন করে এলাকার শিক্ষা ও সংস্কৃিতর তীর্থভূমি ও উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সিদ্ধেশ্বরী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ র্যাংকিং এ তৃতীয় ও ঢাকা মহানগরীতে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি এ জনপদের জ্ঞান অন্বেষণের তপবন বা চারণভূমি।
সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশশাখায় পাঠদান শুরু করে। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আমিরুল হক সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশকালীন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা উত্তর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী প্রদান করেন এবং বর্তমান ঠিকানায় নতুন আঙ্গিকে কার্যক্রম শুরু হয়। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম কলেজের নতুন ১২তলা ভবনে পরিচালিত হয়। ১৯৭০ সালে সিদ্ধেশ্বরী কলেজটি ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে দিবা শাখাতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স, ২ টি বিষয়ে প্রফেশনাল কোর্স, ১ টি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স, ১১টি বিষয়ে মাষ্টার্স শেষপর্ব এবং ৭টি বিষয়ে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। ডিগ্রি (পাস) কোর্সে বিএ, বিএসএস ও বিবিএস শ্রেণিতে পাঠদান করা হয়। ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসন সংখ্যা ৭০০টি । বাউবি’র অধীনে উচ্চমাধ্যমিক, বিএ ও বিএসএস প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে মেয়ে ও ছেলেদের জন্য আলাদা ভবনে ক্লাস পরিচালিত হয়।
বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান, শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড টিচার এবং ক্লাস মনিটরিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, প্রতিটি বিভাগে স্বতন্ত্র সেমিনার, বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগে একটি করে বিজ্ঞানাগার, একটি সমৃদ্ধি Computer Lab & Multimedia শ্রেণিকক্ষ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। অনার্স শ্রেণিতে অধ্যয়নরত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মেধা বৃত্তি। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও মেধা শক্তিকে শাণিত করার জন্য জাতীয় দিবস উদযাপন, সভাসেমিনার, নিয়মিত শিক্ষাসফর, ইনডোর-আউটডোর খেলার ব্যবস্থা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্কাউটিং কার্যক্রম চালু রয়েছে। কলেজের সাফল্যের নেপথ্যে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের গভর্নিং বডির দিকনির্দেশনা এবং সুযোগ্য অধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৩০ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ স্বপ্নের উন্নয়নের মহাসড়ক ও মহি সোপানে পৌঁছে যাবে। সেই সোনালি স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য সিদ্ধেশ^রী কলেজ পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশাত্ববোধের শপথ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নৈতিকমূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করণে সিদ্ধেশ্বরী কলেজ সর্বদা সচেষ্ট।